৫ সেকেন্ড রুলঃ মাত্র ৫ সেকেন্ডে জীবন বদলে দেওয়ার একটি সহজ নিয়ম

৫ সেকেন্ড রুল


৫ সেকেন্ড রুল (Five Seconds Rule) হলো একটি সহজ কিন্তু কার্যকরী নিয়ম ও আত্মোন্নয়ন টিপস যা আপনাকে আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করতে পারে। এটি হলো জীবন বদলের সহজ ও সরল নিয়ম। এই নিয়মটির মূল ধারণা হল, যখন আপনি কোনো কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত হন, তখন আপনার কাছে মাত্র ৫ সেকেন্ড সময় থাকে। এই ৫ সেকেন্ডের মধ্যে আপনাকে সেই কাজটি শুরু করে দিতে হবে, নাহলে আপনার মন আপনাকে অন্যদিকে টেনে নিয়ে যাবে। 












৫ সেকেন্ড রুল
৫ সেকেন্ড রুল | Image by Pete Linforth from Pixabay

 

ফাইভ সেকেন্ড রুলের আবিষ্কারকের নাম মেল রবিন্স নামের একজন মোটিভেশনাল স্পিকার। তার রচিত “দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল” বইয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্যাখা করেছেন। মেল রবিন্স বইটিতে ৫ সেকেন্ড রুল দিয়ে জীবন কীভাবে বদলে যায় এবং ৫ সেকেন্ড রুল ব্যবহার করে কীভাবে সফল হওয়া যায় তা খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এটা এমন একটা রুল যার সঠিক নিয়মে প্রয়োগে জীবনের জটিল কিছু সমস্যার সমাধান করা যায়। এই রুল মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে, মানসিক অবস্থার তাৎক্ষণিক পরিবর্তন করতে পারে, অলসতা দূর করতে পারে। আরো অনেক ক্ষেত্রেই এর প্রয়োগ করা যায়। আমি পার্সোনালি এই রুল ব্যবহার করে অনেক উপকার পেয়েছি। এই রুল ব্যবহার করে আমি আমার মনের অবস্থা যেকোন সময় পরিবর্তন করতে পারি। তাই হতাশা, টেনশন, না পাওয়ার কষ্ট, বিচ্ছেদের কষ্ট ইত্যাদি আমার মনে কোন ইফেক্ট তৈরি করতে পারেনা। 



৫ সেকেন্ড রুলের পদ্ধতি


মেল রবিন্সের ৫ সেকেন্ড রুল বইয়ে বর্ণিত পদ্ধতিটি খুবই সহজ। এতো সহজ নিয়ম যে, যেকেউ যেকোন সময় এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন। আপনি যখন কোনো কাজ শুরু করতে চান বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে চান, তখন ৫ সেকেন্ডের মধ্যে সেটি শুরু করার জন্য নিজেকে বাধ্য করবেন। আপনি মনে মনে ৫ থেকে ১ পর্যন্ত উল্টো গণনা করবেন, তারপর সেই কাজটি শুরু করবেন। এটি আপনাকে সেই মুহূর্তের দ্বিধা বা অলসতা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ দিবে। যখনই আমরা কিছু করার সিদ্ধান্ত নেই, আমাদের মস্তিষ্ক প্রায়ই দ্বিধা, ভয় বা অলসতা তৈরি করে। এই রুলের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে সেই দ্বিধা কাটিয়ে ওঠার সময় না দিয়ে কাজটি শুরু করার জন্য নিজেকে প্ররোচিত করা যাবে, এটাই এই রুলের মূল উদ্দেশ্য। এটি ব্যক্তিগত উন্নয়ন এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য একটি শক্তিশালী টুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।




  • আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠতে চান কিন্তু বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করেনা। 

  • বিশেষ কাউকে মিস করছেন, মনে শুধু তার চিন্তা বা বিচ্ছেদের কষ্ট আপনাকে শেষ করে দিচ্ছে। 

  • কোনমতেই প্রিয় মানুষকে ভুলতে পারছেন না, কোন কাজে মন বসাতে পারছেন না। 

  • আলসেমির কারনে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারছেন না। 

  • মনকে কন্ট্রোল করতে পারছেন না একদমই, মনের বর্তমান পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন।

  • কোন কারনে মুড অফ বা প্রচন্ড রেগে গেছেন, এই অবস্থার পরিবর্তন চাচ্ছেন।


 


উপরোক্ত যেকোন পরিস্থিতিতে মূল পদ্ধতি প্রয়োগের পূর্বে বিকল্প কি করবেন সেটা ঠিক করে রাখুন। এবার মনে ইনপুট দিন এবং সংকল্প করুন যে- ৫ থেকে ১ কাউন্টডাউন করার পর থেকে বর্তমান চলমান কাজ বা চিন্তা বাদ দিয়ে বিকল্প কাজ বা চিন্তা অবশ্যই শুরু করবো, কোনরকম আলসেমি, অজুহাত বা ফাঁকি চলবেনা। এবার কাউন্টডাউন করুন ৫...৪...৩...২...১। এবার নিজেই অবাক হয়ে যাবেন এই রুলের ফলাফল দেখে। এই নিয়মটি মূলত আপনার মস্তিষ্ককে সিদ্ধান্তহীনতা এবং অজুহাত থেকে মুক্ত করার জন্য একটি উপায়।



আরো স্পেসিফিক ভাবে নির্দিষ্ট একটি কাজের পরিবর্তন করতে "৫ সেকেন্ড রুল" এর ব্যবহার নিম্নলিখিতভাবে করা যেতে পারেঃ

মনে মনে গণনা করুনঃ যখন আপনি কোনো কাজ শুরু করতে চান, তবে চিন্তা করতে থাকুন যে আপনি ৫ সেকেন্ডের মধ্যে সেই কাজটি শুরু করবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি সকালে বিছানা থেকে উঠতে চান, তবে মনে মনে ৫ থেকে ১ পর্যন্ত গুনুন।


অ্যাকশন শুরু করুনঃ ৫ সেকেন্ডের মধ্যে সেই কাজটি শুরু করুন। উদাহরণস্বরূপ, ৫ সেকেন্ড গুনার পর বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ান।


দ্বিধা কাটিয়ে উঠুনঃ এই ৫ সেকেন্ডের মধ্যে আপনি মস্তিষ্কের স্বাভাবিক দ্বিধা, ভয়, বা অলসতা কাটিয়ে উঠতে পারেন। গণনার মাধ্যমে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে প্রেরণা পান এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেন।


নিয়মিত প্রয়োগ করুনঃ এই পদ্ধতিটি নিয়মিতভাবে প্রয়োগ করলে, এটি আপনার অভ্যাসে পরিণত হয় এবং স্বাভাবিকভাবে আপনার চিন্তাধারা এবং কর্মপদ্ধতি পরিবর্তিত হয়। "৫ সেকেন্ড রুল" মূলত মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক প্রতিরোধকে কাটিয়ে উঠতে এবং কার্যকরভাবে কাজ শুরু করতে সাহায্য করে। এটি আপনাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে এবং কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক হয়।


 

কেন ৫ সেকেন্ড?


৫ সেকেন্ড রুলের মূলে রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক কারণ। ৫ সেকেন্ড রুল কীভাবে কাজ করে? লেখক এর মনস্তাত্ত্বিক কারনের চেয়ে এর প্রয়োগ ও ফলাফলের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। মেল রবিন্সের বই পর্যালোচনা করে জানা যায়, আমাদের মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবেই স্বাচ্ছন্দ্যের জোনে থাকতে চায় এবং নতুন কিছু করার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যখন আমরা কোনো নতুন কাজ শুরু করতে চাই, তখন এই প্রতিরোধ আমাদেরকে থামিয়ে দিতে চায়। এই ৫ সেকেন্ডের মধ্যে যদি আপনি কাজটি শুরু করে দেন, তাহলে আপনার মস্তিষ্কের এই প্রতিরোধকে কাটিয়ে উঠতে পারবেন এবং আপনার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন। 


মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়ার সময় ৫ সেকেন্ড হলো সেই স্বর্ণালী সময় যখন আমাদের মস্তিষ্ক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না যে, আমরা এই কাজটি করবো নাকি করবোনা। এই সময়ের মধ্যে যদি আমরা কাজটি শুরু করে দেই, তাহলে আমাদের মস্তিষ্ককে অন্য পথে চিন্তা করার জন্য বাধা দেওয়া যায়। ৫ সেকেন্ড রুলকে একটি অভ্যাসে পরিণত করা সহজ। এই ছোট্ট সময়ের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং কাজ শুরু করা আমাদের জন্য অনেক সহজ। অনেক সময় আমরা কোনো কাজ শুরু করতে ভয় পাই। এই ৫ সেকেন্ডের মধ্যে ভয়কে জয় করে কাজ শুরু করা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। 


৫ সেকেন্ডের চেয়ে কেন আরো কম বা বেশি নয়? এর উত্তরে বলা যায়- ৫ সেকেন্ড বেঁছে নেয়ার উপযুক্ত কারন রয়েছে। যদি সময় আরো কম হয়, তাহলে আমাদের কাছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় নাও থাকতে পারে। আবার যদি সময় আরো বেশি হয়, তাহলে আমাদের মস্তিষ্ক আবারও নেতিবাচক চিন্তা করতে শুরু করতে পারে এবং আমরা কাজটি না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারি। তাই ৫ সেকেন্ড হল সেই স্বর্ণালী মধ্যবর্তী সময় যখন আমাদের মস্তিষ্ককে চালু রাখা এবং কাজ শুরু করা সবচেয়ে সহজ। 



 

 

বিস্তারিত জানতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *