চাকরি বনাম ব্যবসাঃ বিস্তারিত তুলনা এবং আপনার জন্য সঠিক পছন্দ
চাকরি বনাম ব্যবসা
নিঃসন্দেহে, চাকরি বনাম ব্যবসা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ধ্রুবক বিতর্কের বিষয়। ব্যক্তিগত এবং আর্থিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোন পথটি সর্বোত্তম এবং আদর্শভাবে, আপনার কোন পথটি অনুসরণ করা উচিত তা নিয়ে বেশিরভাগ লোকই বিভ্রান্ত। প্রতিটির নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে, যার ফলে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। আপনিও যদি বিভ্রান্ত হয়ে থাকেন এবং একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম হন, তবে এই নিবন্ধটি আপনাকে বলবে যে চাকরি ও ব্যবসা কি এবং আপনার কোনটি বেছে নেওয়া উচিত?
চাকরি বনাম ব্যবসা | Image by Tung Nguyen from Pixabay |
আমাদের ক্যারিয়ার নিয়ে আমরা সবসময়ই চিন্তা করি এবং প্রায়ই বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই ভবিষ্যত পেশা কি হবে? ব্যবসা নাকি চাকরি কোনটা শুরু করব, তা নিয়ে অনেক চিন্তা করেও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। চাকরি ও ব্যবসা উভয়েরই সুবিধা এবং অসুবিধা আছে। এই ব্লগে, আর্থিক স্থিতিশীলতা, ব্যক্তিগত পরিপূর্ণতা এবং দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধির সম্ভাবনা সহ চাকরি এবং ব্যবসার মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করবো। আপনি সাম্প্রতিক স্নাতক বা একজন অভিজ্ঞ পেশাদার মানুষ, এই লেখাটি আপনার আগামী কর্মজীবন কি হবে সেই সম্পর্কে একটি সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সামাজিক ও রাজনৈতিক ধারা, শিক্ষা পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে জেনারেশনকে চাকরিমুখি করা হয়েছে, আবার শুধু চাকরি বললেও ভুল বলা হবে, আসলে আমাদের সমাজব্যবস্থায় নতুন জেনারেশনকে স্পেসিফিকভাবে সরকারী চাকরির দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে জীবনের টার্গেট- হয় ডাক্তার হও নয়তো ইঞ্জিনিয়ার অথবা বিসিএস ক্যাডার আর এইগুলো সম্ভব না হলে সরকারী যেকোন একটা কিছু হলেই হলো। আমাদের জনসংখ্যার বিশাল অংশই এই স্পেসিফিক পেশার বাইরে থাকে। সেক্ষেত্রে কোন মতেই অন্যান্য প্রাইভেট জব বা ব্যবসাকে সমর্থন করা হয়না অথচ বিদেশে গিয়ে লেবার, ক্লিনার, ওয়েটারের চাকরি সমর্থন যোগ্য। এবারে আমরা চাকরি ও ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি।
চাকরি কি?
চাকরি একটি বিস্তৃত শব্দ যা অর্থপ্রদানের কর্মসংস্থানকে বোঝায়। এখানে একজন কর্মচারী একটি চুক্তির উপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট বেতন অর্জনের জন্য নির্ধারিত কাজগুলি সম্পাদন করে। চাকরিতে আয় হল পূর্বনির্ধারিত এবং নির্দিষ্ট কিছু কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য কর্মচারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কর্মচারীর সক্ষমতার উপর ভিত্তি করেই তাকে বাছাই করে নিয়োগ দেওয়া হয়। চাকরি ফুল-টাইম বা পার্ট-টাইম যাই হোক না কেন, সর্বদা একজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি থাকেন যিনি কর্মচারীর কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করেন, বেতন নির্ধারণ করেন এবং তার জন্য নির্ধারিত কাজগুলি অর্পণ করেন। নির্ধারিত কাজগুলি সম্পাদন করতে এবং একটি ভাল পারফরম্যান্স বজায় রাখতে পারেন এমন যে কেউ চাকরি পেতে পারে। সাধারণত, নিয়োগকারী সঠিক প্রার্থী খুঁজে পেতে ইন্টারভিউ নেন। একটি চাকরি পেতে, একজনের অবশ্যই একাডেমিক ও কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যোগ্যতার পরিচয় থাকতে হবে। একজন যত বেশি যোগ্য, কর্মচারীর কর্মজীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তত বেশি সুযোগ পাওয়া যায়। চাকরিতে কিছু ঝুঁকি আছে যেগুলো উপেক্ষা করা যায়না। সাধারণত, অনৈতিক কোন কাজে অংশগ্রহন না করলে বা ঠিকমতো পারফর্মেন্স না করতে পারলে বা অফিস পলিটিক্সের কারনে চাকরি চলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। তাছাড়া, কোম্পানি বা সংস্থা কোনো কারণ ছাড়াই আপনাকে বরখাস্ত করবে না, তবে একটা ঝুঁকি থেকেই যায় কারন আপনি যেকোনো কারনেই চাকরিচ্যুত হতে পারেন। যাইহোক, আপনাকে ঝুঁকি নিয়ে চিন্তা কারণ নেই, নিয়ম অনুযায়ী ফলাফল যাই হোক না কেন, আপনি সবসময় আপনার কাজের জন্য ক্ষতিপূরণ পাবেন।
চাকরির সুবিধা
একটি চাকরি অনেক কারনেই একটি ভাল পেশা, চাকরিতে নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি পাওয়া যায়ঃ
আয়ের স্থির উৎস
যাদের চাকরি আছে তাদের ব্যবসার মালিকের চেয়ে ভালো আর্থিক নিরাপত্তা আছে। তার মানে এই আয় কর্মচারী নিয়মিত পায় - মাসিক বা সাপ্তাহিক হিসাবে। এর সাথে কর্মচারী স্বাস্থ্য বীমা, বার্ষিক বোনাস, পদোন্নতি, বেতনের ছুটি ইত্যাদি সহ অন্যান্য সুবিধাগুলিও পান তবে এই সুবিধাগুলি প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক। অন্যদিকে, একজন ব্যবসার মালিককে প্রাথমিক পর্যায়ে ঝুঁকি নিতে হতে পারে এবং আয়ের একটি স্থির উৎস নাও পেতে পারে। একটি ব্যবসা চালানোর জন্য মালিককে বিনিয়োগের জন্য তহবিল উৎস করতে হবে, যার ফলে কাঙ্ক্ষিত আয় নাও হতে পারে। এছাড়াও, ব্যবসার মালিক হিসাবে উপার্জনের কোন সীমা নেই। ব্যবসা সফল হয়ে গেলে অপেক্ষাকৃত বেশি আয়ের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন হয়না।
নির্দিষ্ট কাজের সময়
বেশিরভাগ সংস্থায়, কর্মচারীর একটি ৮ থেকে ৯ ঘন্টার সময়সূচী থাকে। ব্যবসার মালিকদের জন্য, কাজের সময়সূচী নমনীয়। কিন্তু এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যবসা চালানোর জন্য ব্যবসার মালিককে তাদের একক ব্যবসায় তাদের সমস্ত সময় এবং সংস্থান সম্পূর্ণরূপে বিনিয়োগ করতে হতে পারে।
ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়া সহজ
যাদের চাকরি আছে তারা সবসময় কোর্স করে বা পর্যাপ্ত কাজের অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে তাদের ক্যারিয়ারে এগিয়ে যেতে পারে। চাকরিরত প্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর পজিশনে নিজেকে ডেভেলপ করার সুযোগ আছে। ব্যবসার মালিকরাও স্কিল ডেভেলপমেন্টের দিকে নজর দিতে পারেন, তবে কর্মিরা খুব সহজেই প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে পারে কিন্তু ব্যবসায়ী খব সহজে ব্যবসার প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে পারেন না।
এটি আপনার সামাজিক মর্যাদা বাড়াবে
একটি চাকরি হতে পারে নিজেকে উন্নত করার এবং উচ্চতর সামাজিক মর্যাদার মতো জিনিসগুলি অর্জন করার একটি দুর্দান্ত উপায়। চাকরির আলাদা একটি মর্যাদা আছে। অবশ্যই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর চেয়ে একজন চাকরিজীবীর সামাজিক মর্যাদা অনেক বেশি কিন্তু বড় ব্যবসায়ী হলে তার মর্যাদা অসীম।
দক্ষতা এবং ক্ষমতা বিকাশ করুন
একটি চাকরি নির্দিষ্ট ক্যারিয়ারে সফলতা লাভের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং ক্ষমতা বিকাশে সহায়তা করতে পারে। চাকরিতে শেখা দক্ষতা পরবর্তিতে ক্যারিয়ার গঠনে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। এমনকি পরবর্তিতে ব্যবসায়ে মনোনিবেশ করলেও বাড়তি সুবিধা ব্যবসায়ীক ঝুকি অনেকাংশেই কমিয়ে দিবে কারন চাকরিরত অবস্থায় ব্যবসার অনেক নেগেটিভ দিক এবং নেগেটিভ দিকেগুলো কিভাবে পজিটিভে রূপান্তরিত করতে হয় সেটা খুব ভালোভাবে অবজারবেশন কার যায়। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীকে দক্ষতা অর্জন করেই ব্যবসা চালু করতে হয় নয়তো বড় ধরনের ঝুঁকি সম্ভাবনা থাকে।
আত্মবিশ্বাস এবং আত্মমর্যাদা গড়ে তুলুন
একটি চাকরি একটি আত্মসম্মান বৃদ্ধিকারী, শুধুমাত্র এই কারণে নয় যে এটি আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রদান করে, বরং এটি মর্যাদার এক অনুভূতি প্রদান করে। চাকরি আমাদের নিজেদের সম্পর্কে এবং সমাজে আমাদের মূল্যবোধ সম্পর্কে ভালো বোধ করতে দেয়। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বা বিষণ্ণতায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে।
চাকরির অসুবিধা
চাকরি করার অনেক সুবিধা থাকলেও এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। আসুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাকঃ
সীমিত আয়
চাকরির ক্ষেত্রে আয়ের পরিমাণ সাধারণত নির্ধারিত এবং সীমিত। বেতন বাড়ার হার সবসময় একই থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধি কম হতে পারে বা অনেকদিন পরে বৃদ্ধি পাওয়া যেতে পারে। ব্যবসার মতো আয় বাড়ানোর সুযোগ কম থাকে।
উন্নতির সীমাবদ্ধতা
চাকরিতে পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট সময় বা নিয়মের অপেক্ষা করতে হয়, যা অনেক সময় ধীরগতির হতে পারে। এতে কর্মচারীরা তাদের ক্যারিয়ারের উন্নতি নিয়ে হতাশা বোধ করতে পারেন।
স্বাধীনতার অভাব
চাকরির ক্ষেত্রে কাজের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা সীমিত। কর্মচারীদের উপর নির্দেশনা ও নিয়ম-কানুন মেনে চলার চাপ থাকে, নিজের মতো করে কাজ করার স্বাধীনতা কম থাকে যা তাদের সৃজনশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
কাজের চাপ
কাজের চাপ বেশি হতে পারে। ডেডলাইন মেনে চলতে হয় এবং কাজের বোঝা অনেক সময় বাড়তে পারে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চাপ, কাজের পরিমাণ বেশি হওয়া, এবং কাজের স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্বেগ—এগুলো চাকরির সাধারণ চ্যালেঞ্জ। অতিরিক্ত চাপ কর্মজীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
স্থির রুটিন
প্রতিদিন একই ধরনের কাজ করতে হতে পারে, যা একঘেয়েমি তৈরি করতে পারে এবং কর্মস্পৃহা কমিয়ে দিতে পারে।
নিরাপত্তার অনিশ্চয়তা
বেসরকারি চাকরিতে কাজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকতে পারে, যেমন চাকরি চলে যাওয়া বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি
ক্যারিয়ারে স্থবিরতা
কিছু চাকরিতে ক্যারিয়ারের দ্রুত অগ্রগতির সুযোগ না থাকায় কর্মীরা এক জায়গায় স্থবির হয়ে পড়তে পারেন, যা তাদের পেশাগত উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা
নতুন চাকরি পাওয়া কঠিন হতে পারে। বিশেষ করে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা খুব বেশি।
কাজের পরিবেশ
কাজের পরিবেশ সবসময় ভালো নাও হতে পারে। কাজের স্থানে মানসিক চাপ, হয়রানি, বৈষম্য ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে ব্যাঘাত
অনেক সময় চাকরির কারণে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটে, বিশেষ করে যদি কাজের সময়সীমা দীর্ঘ হয় বা কাজের চাপ বেশি থাকে।
স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব
অতিরিক্ত কাজের চাপ, দীর্ঘ সময় বসে থাকা, এবং মানসিক চাপের কারণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়তে পারে।
এই অসুবিধাগুলোর কারণে অনেকেই ক্যারিয়ার বিকল্প হিসেবে ব্যবসা বা ফ্রিল্যান্সিংয়ের দিকে ঝোঁকেন। তবে, চাকরির এসব অসুবিধা কাটিয়ে উঠার উপায়ও রয়েছে, যেমন ভালো কর্মপরিবেশ, দক্ষতা উন্নয়ন এবং সঠিক ক্যারিয়ার পরিকল্পনা। চাকরির অসুবিধাগুলি সবার জন্য একই হবে না। এটি আপনার ব্যক্তিত্ব, কাজের ধরন এবং কাজের পরিবেশের উপর নির্ভর করে। আপনার জন্য কোনটি গুরুত্বপূর্ণ তা ভালোভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিন।
ব্যবসা কি?
একটি ব্যবসা হল এক ধরনের সংস্থা যা এক বা একাধিক মালিক দ্বারা পরিচালিত। একজন ব্যবসার মালিক হিসাবে, একজনকে একটি ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করতে হবে এবং একটি ব্যবসায়িক কৌশল থাকতে হবে যা প্রতিষ্ঠানকে উপস্থাপন করে এবং এটিকে বাজারে দাঁড়াতে সাহায্য করে। একটি ব্যবসা শুরু করা একটি নিয়মিত চাকরি পাওয়ার চেয়ে আরও বেশি দায়িত্ব নিয়ে আসে। ব্যবসা সফলভাবে চালানোর অর্থ হল ঐ মালিক(দের) অর্থ, ব্যবস্থাপনা, বিপণন, মানবসম্পদ ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান রয়েছে। ব্যবসার মালিককে অবশ্যই চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগের দিকে নজর দিতে হবে যারা একটি গ্রুপ বা দল হিসাবে পৃথক কাজ সম্পাদন করতে পারে। একটি ব্যবসা চালানোর অর্থ হল এজন ব্যবসায়ী চাকরিজীবীর তুলনায় অনেক বেশি অভীজ্ঞতা, ম্যানেজিং পাওয়ার, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান, দায়ীত্ববোধ, সাহস, বিচক্ষণতার অধিকারী। একটি চাকরিতে, একজনকে নিয়মিত ৯:০০ থেকে ৫:০০ টা সময়সূচীতে লেগে থাকতে হয়, সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয় দিন। এই নির্দিষ্ট সময়সূচী ব্যবসার মালিক দ্বারা অনুসরণ করা আবশ্যক নয়। কিন্তু ব্যবসার মালিকের অধীনে কর্মচারীর একটি নির্দিষ্ট কাজের সময়সূচী থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা হল- একজন চাকরিজীবী সবসময়ই একজন ব্যবসায়ীর অধীন।
ব্যবসার সুবিধা
আপনার নিজের ব্যবসা শুরু প্রচুর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং সংকল্প প্রয়োজন। এটির জন্য একটি উদ্যোক্তা মানসিকতা, উপযুক্ত ও সু-নির্দিষ্ট ব্যবসায়ীক পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং সুযোগগুলি কাজে লাগাতে হবে তবেই একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এবারে, ব্যবসার সুবিধাগুলি আলোচনা করছিঃ
স্বাধীনতা এবং কর্তৃত্ব
ব্যবসার মালিকদের ব্যবসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হয়। ব্যবসায় পূর্ণ স্বাধীনতা আছে কিন্তু চাকরিতে নেই। ব্যবসার মালিকরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিতে তাদের কাউকে জিজ্ঞাসা করতে বা নির্ভর করতে হয়না, তারা তাদের সিদ্ধান্ত ঐ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত কর্মচারীদের মানতে বাধ্য করাতে পারেন। কিন্তু চাকরিজীবীদের একক সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার নেই, তারা সেই কাজই করে যে কাজ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নির্ধারণ করে দেন। ব্যবসাতে নিজের প্রতিষ্ঠানে মালিকদের কোন প্রতিপক্ষ নেই কিন্তু চাকরিতে কর্মচারীদের প্রতিপক্ষ অন্যান্য সহকর্মিরা।
একটি বিস্তৃত অভিজ্ঞতা অর্জন
একজন ব্যবসার মালিক হিসাবে, মানুষের মন বোঝা, চাহিদা বোঝা অত্যান্ত জরুরী। তারা ব্যবহারিক জগতে ক্রমাগত এই ধরনের হিউম্যান সাইকোলিজিক্যাল টার্মগুলি শিখে এবং নিজ ব্যবসাতে প্রয়োগ করে তাতে এই ধরনের অভিজ্ঞতাগুলি তাদের বৃহত্তর দক্ষতার বিকাশ ঘটায় এবং পেশাদারভাবে বিচক্ষণ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে।
ব্যবসায়ীক লভ্যাংশ
যেহেতু একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকই সর্বেসর্বা, তিনি প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী, পুরো সম্পত্তি তারই, তাই অর্জিত সমস্ত রাজস্ব ব্যবসার মালিকের কাছেই যায়। যারা চাকরি করেন তারা ব্যবসার মালিকের তুলনায় অতি নগন্য লভ্যাংশই পান, কর্মচারী প্রতিষ্ঠানের অর্জিত লাভের খুব সামান্য অংশই উপার্জন করে।
উপার্জনের বৃদ্ধির সম্ভাবনা
একজন ব্যক্তি তার নিজের প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে আয় উপার্জন করতে পারে। তাদের প্রতিদিনের কাজের চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জনের সম্ভাবনা সবসময় থাকে। এটি তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রদান করবে এবং তাদের অন্যান্য উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলি পূরণ করবে। এছাড়াও তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্যও আর্থিকভাবে সহযোগিতা প্রদান করতে সক্ষম হবে তাদের উপর যারা নির্ভরশীল। চাকরির ক্ষেত্রে এই সুবিধাটি পাওয়া যায়না কারন কর্মচারীর আয় প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী চলবে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই কম বা বেশি মুনাফা করলেও কর্মচারীর আয়ে এর কোন প্রভাব ফেলেনা, এটা নির্দিষ্ট নিয়মেই চলে।
নমনীয়তা
একজন ব্যবসায়ী সম্পূর্ণরূপে নমনীয়তার উপর ভিত্তি করে তাদের নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা করে, এখানে তাদের ইচ্ছামত নমনীয় বা অনমনীয় হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তারা প্রয়োজনের সময় অফিসে যেতে পারে, অন্য কারো কাছে কাজের দায়ীত্ব দিয়ে কয়েক দিনের ছুটি নিতে পারে। শুধু তাই নয়, তারা চাইলে মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে কাজ করতে পারে। এই সুবিধা চাকরিজীবীর পক্ষে কোনমতেই সম্ভব নয়, তারা প্রতিষ্ঠানের নিয়মের বাইরে কিছু করতে পারেনা।
নিয়ন্ত্রণ
আপনার নিজের কোম্পানির মালিকানা মানে আপনি আপনার ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণে আছেন। আপনি যখন চান তখন কাজ করার ক্ষমতা আপনার আছে এবং আপনি চাইলে দূর থেকে কাজ করার বিকল্পও আছে। আপনি দৈনিক ভিত্তিতে যা করেন তার উপরও আপনার অনেক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, যার অর্থ তারা চাইলে আপনার দিনের কাজ থেকে আরও বেশি সময় নিতে পারে এবং এখনও তাদের পরিবারের সদস্যদের যত্ন নিতে পারে যারা তাদের উপর নির্ভরশীল।
কার্বন ফুটপ্রিন্ট
অন্য কারো জন্য কাজ করা এবং একজন উদ্যোক্তা হওয়ার মধ্যে একটি পার্থক্য হল যে তাদের নিজস্ব কোম্পানির মালিক হয়ে, উদ্যোক্তারা আরও টেকসই পদ্ধতি গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। তারা কীভাবে কাজ করতে চান, তারা কত ঘন্টা কাজ করতে চান এবং দিনে কত ঘন্টা কাজ করতে চান বা এমনকি যদি তাদের কাজ করার প্রয়োজন হয় তা বেছে নেওয়ার ক্ষমতার সাথে, উদ্যোক্তারা বিকল্প শক্তির উৎস খুঁজে পেতে এবং গ্রহণ করতে সক্ষম হন। টেকসইতার দিকে পদক্ষেপ।
সুযোগ
ব্যবসার মালিকরা তাদের পছন্দের লোকেদের সাথে দেখা করার এবং কাজ করার সুযোগ পান। তারা এমন সম্পর্কের নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে যা সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা জাল ছাড়াই খারাপভাবে ব্যর্থ হতে পারে।
ব্যক্তিত্ব
কোম্পানির মালিকদের কারো নম্বর ২ বা ৩ এর পরিবর্তে একজন অনন্য ব্যক্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এটি কেবল তাদের দৈনন্দিন জীবনে যা চায় তা করার আরও সুযোগ দেয় না, তবে এর অর্থ তারা অন্যদের থেকে নিজেদের আলাদা করতে পারে। এমন একটি কুলুঙ্গি খোঁজা যা অন্য কারো নেই।
পরিবর্তন
নিজের ব্যবসা শুরু করার পরে, কেউ ঝুঁকি নেওয়ার এবং নিজের জীবন পরিবর্তন করার সুযোগ পায়। তারা নতুন জিনিস চেষ্টা করতে পারে, তাদের দক্ষতা ভাগ করে নিতে পারে এবং ক্যারিয়ার পরিবর্তন করতে পারে যার জন্য তারা এত কঠোর পরিশ্রম করেছে তার সবকিছু না হারিয়ে।
অর্থ
ব্যবসার মালিকরা সাধারণত তারা যে অর্থ উপার্জন করে তার দায়িত্বে থাকে, তাই তারা তাদের আর্থিক ভবিষ্যতের জন্যও দায়ী। আর যে জীবন তারা বাঁচতে চায়। সুখ আত্ম-সন্তুষ্টির সমান, যা উদ্যোক্তাদের লক্ষ্য। একজন উদ্যোক্তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তার দক্ষতা ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে আয় করার ক্ষমতা।
অর্জন
কোম্পানির মালিকরা একবার একটি প্রকল্প হাতে নিলে, কোন কিছুই তাদের সাফল্য অর্জন থেকে আটকাতে পারে না। তারা একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ চালিয়ে যাবে যদিও এটি অর্জন করা অসম্ভব বলে মনে হয়। বিলম্ব ঘটে যখন একজন ব্যক্তি একটি কাজ শুরু করেন না কারণ পরিণতি খুব বড়। যাইহোক, এটি তাদের থামায় না যারা কিছু অর্জন করতে চায়। তারা তাদের জুতা পরবে এবং তাদের লক্ষ্যের দিকে কাজ চালিয়ে যাবে, এমনকি পৌঁছানো অসম্ভব মনে হলেও।
ব্যবসার অসুবিধা
ব্যবসা শুরু করা এবং তা সফলভাবে পরিচালনা করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। একজন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হওয়ার সুবিধা অসুবিধা দুইই আছে। ব্যবসার কিছু সাধারণ অসুবিধা রয়েছে, যা অনেক উদ্যোক্তা তাদের ব্যবসায়িক যাত্রায় অনুভব করতে পারেন। আসুন ব্যবসার অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাকঃ
আর্থিক ঝুঁকি
ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রাথমিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়, যা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ব্যবসার শুরুতে লাভজনক হওয়া নাও হতে পারে, এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসার ক্ষতি হলে বিনিয়োগ হারানোর সম্ভাবনা থাকে।
দীর্ঘ সময় ও কঠোর পরিশ্রম
ব্যবসা সফল করতে হলে প্রচুর সময় ও কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। ব্যক্তিগত জীবন এবং পরিবারের সাথে সময় কাটানো কঠিন হয়ে পড়তে পারে, কারণ ব্যবসায় সফলতার জন্য উদ্যোক্তাদের নিরলস পরিশ্রম করতে হয়।
অনিশ্চিত আয়
ব্যবসায় আয়ের কোনো নিশ্চয়তা নেই। ব্যবসার সফলতা বা ব্যর্থতার উপর ভিত্তি করে আয় বাড়তে বা কমতে পারে। বিশেষ করে নতুন ব্যবসায়ীরা প্রথম কয়েক বছর আয় নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতে পারেন। তাছাড়া ব্যবসার ভবিষ্যৎ সবসময় নিশ্চিত নয়। বাজারের পরিবর্তন, প্রতিযোগিতা, এবং অন্যান্য অনিশ্চিততার কারণে ব্যবসা ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ঝুঁকি এবং চাপ
ব্যবসার সফলতা ও ব্যর্থতার সমস্ত দায়িত্ব উদ্যোক্তার উপর থাকে, যা মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কর্মীদের পরিচালনা, গ্রাহকদের সন্তুষ্ট রাখা, এবং ব্যবসার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে উদ্যোক্তারা অতিরিক্ত চাপ অনুভব করতে পারেন। তাছাড়া ব্যবসার সফলতার জন্য নিয়মিত ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজন হয়, যা অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য হতে পারে।
বাজারের প্রতিযোগিতা
প্রতিটি ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতা থাকে। অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে বেঁচে থাকতে হয়। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা কঠিন হতে পারে। নতুন ব্যবসা শুরু করার সময় প্রচুর প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়, যা ব্যবসাকে সফল করা কঠিন করে তোলে।
জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব
নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন হয়। যদি এই জ্ঞান ও দক্ষতা না থাকে তাহলে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা ব্যবসার ক্ষতির কারণ হতে পারে।
আইনি ও নিয়ন্ত্রক চ্যালেঞ্জ
ব্যবসা শুরু ও পরিচালনার জন্য অনেক আইনি জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। ট্যাক্স, লাইসেন্স, এবং অন্যান্য আইনি বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। সঠিক নিয়ম না মানলে ব্যবসার উপর আর্থিক জরিমানা বা আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
উচ্চ ব্যয়
ব্যবসার জন্য প্রচুর ব্যয় হতে পারে, যেমন জায়গা ভাড়া, কর্মী নিয়োগ, সরবরাহ কেনা ইত্যাদি। যদি আয় যথেষ্ট না হয়, তবে এই ব্যয় মেটানো কঠিন হয়ে পড়ে।
এই অসুবিধাগুলো থাকা সত্ত্বেও, ব্যবসা শুরুর আগে জানা জরুরি বিষয় বিশ্লেষণ, সঠিক পরিকল্পনা, কৌশল, এবং সংকল্প থাকলে ব্যবসা সফল করা সম্ভব। তবে উদ্যোক্তাদের এসব চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত এবং আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।